কেন আমরা জিহাদ করবো? (পর্ব ১)
বন্ধুরা আমার,
আজ মুসলিম জাতির এ করুন পরিস্থিতির প্রতি দৃষ্টিপাতকারী যে কোন মানুষ অতি সহজেই অনুধাবন করতে সক্ষম হবে যে, মুসলমানদের এ দূরাবস্থার মূল হচ্ছে জিহাদ ছেড়ে দেয়া, যা হাদীসের ভাষায় দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট।
পথভ্রষ্ট জালিম শাসকরা আজ ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলমানদের ঘাড়ের উপর সওয়ার হয়ে বসে আছে। তার প্রকৃত কারণ হল কাফিরররা জিহাদ ছাড়া অন্য কিছুতে ভয় পায়না। আর তাইতো মুসলমানদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে আল্লাহ তা’আলা নির্দেশ করেনঃ
“আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর, যদিও তুমি নিজেকে ছাড়া অন্য কারো যিম্মাদার নও তথাপিও মু’মিনদেরকে জিহাদের প্রতি উদ্ভুদ্ধ কর, হয়তবা এর বিনিময়ে আল্লাহ তোমাদেরকে কাফিরদের কবল থেকে মুক্তি দিবেন, কেননা একমাত্র আল্লাহ তা’আলাই সর্ববৃহৎ বিপদদাতা, এবং দৃষ্টান্ত প্রদর্শন কারী।” (সূরা নিসা, আয়াত ৮৪)
আজ আমরা বিশ্বের সকল মুসলমানদের জিহাদের পথে আহ্বান করছি এবং জিহাদের মাঠে যে তাদেরই আগমনের অপেক্ষা করছি, এর বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তার মধ্যে কতিপয় কারণ এই যে,
১। কুফুরী শাসন ব্যবস্থার মূলোৎপাটন করা।
২। যোগ্য লোকের অভাব।
৩। জাহান্নামের আগুনের ভয়।
৪। ফারজিয়্যাত আদায়ের লক্ষ্যে আল্লাহ তা’আলার আহ্বানে সাড়া দেয়া।
৫। সালাফে সালেহীনের পদাষ্ক অনুসরণ করা।
৬। সূ-দৃঢ় ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দুর্ধর্ষ একটি জানবাজ বাহিনী গঠন করা।
৭। পৃথিবীর নিঃস্ব, অসহায়, মজলুমানদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।
৮। শাহাদাতের সুমহান মর্যাদা লাভের আশায়।
৯। জিহাদ ইজ্জতের রক্ষা কবজ।
১০। জিহাদ প্রভাব প্রতিপত্তি রক্ষার শেষ তুনীর।
১১। জিহাদ ধ্বংস যজ্ঞ থেকে রক্ষাকারী এবং পৃথিবীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
১২। শাস্তি থেকে মুক্তির আশা।
১৩। জিহাদ রিযিক অর্জনের পথ।
১৪। জিহাদ ইসলামী স্থাপত্বের শীর্ষ চূড়া।
১৫। জিহাদই সর্বোত্তম ইবাদাত।
১ম কারণঃ কুফরী শাসন ব্যবস্থার মূলোৎপাটন করার জন্য।
“ফিৎনা শেষ হওয়া পর্যন্ত তাদের সাথে যুদ্ধ কর, যতক্ষণ না পরিপূর্ণভাবে দ্বীন আল্লাহর জন্যে হয়ে যায়, অতঃপর যদি তারা ফিরে আসে তবে আল্লাহ তা’আলা তাদের সকল কাজ প্রত্যক্ষ করছেন।” (সূরা আনফাল, আয়াত ৩৯)।
অতএব এ আয়াত দ্বারা বুঝা গেল যে, জিহাদ বন্ধ হয়ে গেলে সকল ক্ষমতা ও নেতৃত্ব কাফিরদের হাতে চলে যায় এবং ফিৎনা ফাসাদের বিস্তার ঘটতে থাকে, যা মূলত র্শিক।
২য় কারনঃ যোগ্য লোকের অভাব।
বর্তমানে ইসলামী বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসিবত হচ্ছে এমন যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষের অভাব যারা দায়িত্ব পালনে সক্ষম এবং উম্মাতের পেরেশানী দূরিভূত করতে পারে।
সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে যে, “মানুষের উদাহরণ হচ্ছে এমন শত কোটি উটের মত যার মধ্যে একটি সওয়ারী পাওয়াও দুষ্কর।”
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্নিত, একদা তিনি সাহাবায়ে কেরাম (রাদিআল্লাহু আনহু) দেরকে বললেন যে, “তোমরা সকলেই আকাংখা কর”। অতঃপর, প্রত্যেকেই কিছু না কিছু আকাংখা করলেন, অতঃপর তাঁরা বললেন, “হে আমীরুল মু’মিনীন এবার আপনি আকাংখা করুন।” তিনি বললেন আমার আকাংখা যে, “আমার কাছে আবু উবায়দার মত সম্পদে পরিপূর্ণ একটি ঘর হোক।” অর্থাৎ আমিও আবু উবায়দার মত প্রচুর অর্থ সম্পদ ব্যয় করে জিহাদে সাহায্যকারী, গোলামদের মুক্তিকারী এবং সম্পদকে কল্যাণের কাজে ব্যয়কারী হতে চাই।
একদা আমি কুরআনের এক জলসার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, যে মজমায় বহু দুর থেকে ইজ্জত, বুজুর্গী বরকত ও নিয়ামাতের যমীনের দিকে আগমনকারী কিছু আরব তরুন বসা ছিল। (এখানে আমার উদ্দেশ্য আফগান জিহাদে আগমনকারী আরবগণ)
আমি সেই সকল তরুণদের চেহারার দিকে লক্ষ্য করলাম এই জন্যে যে, যদি তাদের মাঝে কোন উত্তম তিলাওয়াতকারী থাকে তবে তাকে এ জলসার আমীর বানিয়ে দিব। কিন্তু আমাকে বড়ই পরিতাপের সহিত বলতে হচ্ছে যে, আমি তাদের মাঝে এমন একজনও পাইনি। এমতাবস্থায় আমি আর একথা না বলে পারছিনা যে, আমরা আমাদের জাতির সাথে ইনসাফ করিনি। একথাটি নাবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ সময় বলেছিলেন, যখন তার চোখের সামনে সাতজন সাহাবী শাহাদাতের অমিয় শুধা পান করে শাহীদ হন।
আমাদের ছাত্র সমাজ ও মুবাল্লিগীনের পক্ষ হতে এ পথের দিকে আগমনের ঐ রকম উৎসাহ পরিলক্ষিত হয়নি, যেমনটি আমরা তাদের ঈমান ও আখলাক থেকে আশা করেছিলাম্ বরং এদের মাঝে এর বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অনেক আবেগের অশ্বারোহীদেরকে এমন পরামর্শ দিতে দেখা গেছে যে, তারা যেন তাদের নিজেদের শহরেই অপেক্ষা করতে থাকে। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, নিজ শহরে তারা জালিম শাসকের বিরুদ্ধে ওষ্ঠদ্বয় নেড়ে একটি কথা বের করতেও সক্ষম নয়। তাছাড়া তাদের মধ্যে কেউ কেউ বোকার মত না জেনে একতরফা প্রচার করছে যে, আফগানিস্তানে মানুষের প্রয়োজন নেই বরং প্রয়োজনিয়তা রয়েছে মালের (অর্থ-কড়ির)। আমি আমার এই ক্ষুদ্র জীবনের আফগান অতিবাহিত দিন ও রাত্রি সমূহের শপথ করে বলছি যে, আমি আফগানিস্তানে যতটা সম্পদের সংকট পেয়েছি তারচেয়ে বহুগুন বেশী প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছি যোগ্য কর্মীর আর মুবাল্লীগের প্রয়োজনীয়তা তো অপরিসীম। হ্যাঁ আমি একথা বলছি যে, এমন সংকটময় অবস্থায় মুজাহিদীনদের মাঝে আমি সুদীর্ঘ ছয়টি বছর অতিবাহিত করার পর এ কথার সত্যতা উপলব্ধি করতে পেরেছি। আমার কথা যদি আপনাদের বিশ্বাস না হয়, তাহলে আসুন আফগানিস্তানের পাহাড়ী উপত্তকায় একবার ঘুরে দেখে যান।
সেখানে আপনি দেখতে পাবেন যে, এমনও এলাকা রয়েছে যেখানে হন্যে হয়ে খোঁজার পরও সুন্দর ভাবে কুরআন তিলাওয়াতকারী একজন লোকেরও সন্ধান পাওয়া যাবে না।
চলুন আমার সাথে অন্য এলাকাতে, তাহলে আপনি জানতে পারবেন যে ঐ বিশাল এলাকাতে একজন লোকও জানাজার নামাজ পড়াতে জানেনা এবং আফগান মুজাহিদীনগন জানাজার নামাজ পড়াতে সক্ষম এমন একজন আলিমের সন্ধানে হন্যে হয়ে ফিরছে। আবার কখনো নিজেদের কাঁধে শাহীদদের লাশ উঠিয়ে মাইলকে মাইল সফর করতে বাধ্য হচ্ছে।
অনুরূপভাবে জিহাদের ফিকহি আহকাম, যার দ্বারা গনিমতের মাল বন্টন, বন্দিদের সাথে আচার ব্যবহার ইত্যাদি ছাড়াও এরকম অসংখ্য বিষয়ে শারীয়াতের বিধানাবলী স্পষ্ট না জানার কারণে মুজাহিদীনগন দূর-দূরান্তের উলামায়ে কিরামদের সাথে সম্পর্কে স্থাপনে বাধ্য হচ্ছে। যেন তারা এ বিধানাবলী জেনে সে অনুযায়ী আমল করতে পারে।
এবং সেখানে সহজ, সরল নম্র-ভদ্র, ধৈর্য্যশীল, ধর্ম ভীরু, সাধাসিধে জিহাদী চেতনা সম্পন্ন আরব তরুনদের সাক্ষাত মিলছে। তারা নিজ নিজ ফ্রন্টে এমন বিচক্ষণতা ও দূর-দর্শিতার প্রমাণ পেশ করছেন যা কিনা উচ্চ শিক্ষিতদের থেকেও পাওয়া দুরুহ ব্যাপার। অথচ তাদের অনেকেই শুধুমাত্র মেট্রিক পাশ ছিলেন।
আমার যথেষ্ট ইচ্ছা থাকা সত্বেও এখানে স্বল্পপরিসরে সকল ঘটনা উল্লেখ করতে সক্ষম নই আর এটা সম্ভবও নয়। আমি শুধুমাত্র উপমা স্বরূপ আব্দুল্লাহ, আনাছ, আবু দাজানা, আবু আছিম, আবু তাহির এ সকল মুজাহীদগনের নাম উল্লেখ করব। আর যদি আপনাদের আবু শোয়াইব উম্মীউল আরাবী সম্পর্কে ঐ সকল ঘটনাবলি জানাই যা পাগমানের ইতিহাসের সোঁনালী অধ্যায়ে খোদিত থাকবে চিরকাল; তবে আপনি পাথরের ন্যায় স্তব্ধ হয়ে যাবেন এবং আপনার পঞ্চ ইন্দ্রীয়ের কার্য বন্ধ হয়ে যাবে। এ ঘটনা যদি আপনি দাড়িয়ে শুনেন তবে দাড়িয়েই থাকবেন আর যদি বসে শুনেন তবে বসেই থাকবেন, যা শুনে আপনার বাক শক্তি হারিয়ে যাবে, তথাপিও আপনাদের কিংকর্তব্য বিমূখতার সমাপ্তি ঘটবেনা।
আমাদের আজও ঐ সকল ভাইদের নিকট অনেক আশা-ভরসা, যারা অদ্যবধি সামাজিক বন্ধন থেকে মুক্তি পাননি এবং স্বীয় গর্দান থেকে গোলামীর জিঞ্জির খুলে ছুড়ে মারতে পারিনন্ িযারা ধোঁকাবাজ পাশ্চাত্য আক্রমণের কারণে সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় চাপে জর্জরিত।
ঐ সকল ভাইদের কাছে আমার এটুকুই আকুতি যে, যদি তারা পরিবারিক ও সামাজিকতার শিকল ভেঙ্গে আমাদের দিকে আসতে না পারেন তবে তারা অবশ্যই যেন আমাদের জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করেন। হে আল্লাহ যে পবিত্র ভূমিতে শাহীদদের আত্মা উড়তে থাকে, দৌড়-ঝাপ ও সাতাঁর কাটতে থাকে, তাদের তুমি স্বশরীরে সেই পবিত্র ভুমিতে উপস্থিত করে দাও।
কোন একদিন আমি কাজী মজলুমকে বললাম যে, আমাদেরকে ক্বারী আছিমের জীবন বৃত্তান্ত আলোচনা করে শুনান, তিনি আপনাদের মধ্য হতে সবেমাত্র শাহীদ হয়েছেন।
কাজী মজলুম বলতে শুরু করলেন। আমি প্রভাব-প্রতিপত্তি, গাম্ভীর্যতা, দৃঢ়তা ও দুঃসাহসীকতায় এমন দ্বিতীয় ব্যক্তির সাক্ষ্যৎ পাইনি, যার প্রভাবের কারণে আমাদের কেহ তার সাথে কথা বলতেও সাহস করত না এবং তার সামনে কেহ পা মেলে বসারও হিম্মত করত না, আর ঠাট্রা-মস্করা তো দূরের কথা।
বন্ধু আমার, এমন ব্যক্তি সম্পর্কে আমি উক্তি করব, যিনি হচ্ছেন অগাধ শ্রদ্ধার পাত্র। আকাশচুম্বি সম্মানী ও কর্মঠ ব্যক্তিত্ব। তিনি শুধুমাত্র মেট্রিক পাশ ছিলেন। তাঁর বয়স ২৩ বছর ছিল এবং তিনি শুধু কুরআনে হাফিজ ছিলেন।
বর্তমানে পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক ও ঘোলাটে হয়ে গেছে-তাই আমাদেরকে ক্বারী আছিমের মত দৃঢ়চেতা ঈমানের অধিকারী হতে হবে। হতে হবে নির্ভিক বাহাদুর। তবেই আমরা অর্জন করব ব্যাপক কার্যক্ষমতা, তবেই আমরা সক্ষম হব মুসলমানদের বড় বড় সমস্য সমূহ সমাধানে ।
তয় কারণঃ “জাহান্নামের আগুনের ভয়”।
আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেন,
“যদি তোমরা জিহাদের জন্যে বের না হও তবে তিনি তোমাদেরকে বেদনা দায়ক শাস্তি দিবেন এবং তোমাদের স্থলে অন্য একটি জাতিকে অধিষ্ঠিত করবেন আর তোমরা তার কোন ক্ষতিই করতে পাবেনা, আল্লাহ সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।” (সূরা তাওবা আয়াত ৩৯)
ইবনু আরাবী বলেন, বেদনা দায়ক শাস্তি হিসেবে দুনিয়াতে এমন করা হবে যে, মুসলমানদের শক্রকে মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দেয়া হবে এবং পরকালে জিহাদের হুকুম অমান্যকারীদের জাহান্নামে পাঠানো হবে।
তাফসীরে কুরতুবী খঃ ৮, ১৪২ পৃষ্ঠায় ইমাম কুরতুবী বলেন, এই আয়াতের দ্বারা উদ্দেশ্য হল যে, কোন কোন সময় কুফুরী শক্তির বাহুবল ও অর্থবল এত বেশী হবে যে, সে অবস্থায় “নফীরে আম” ওয়াজিব হয়ে যাবে।
আল্লাহ তা’আলা অন্যত্র বলেন ,
“যখন ফিরিশতা তাদের আত্মাকে কব্জা করবে এমতাবস্থায় যে, তারা নিজেদের উপর অত্যাচার করছে তখন তিনি তাদের প্র্শ্ন করবেন যে, তোমরা কোথায় ছিলে? জবাবে তারা বলবে আমরা পৃথিবীতে অসহায় এবং মজলুম ছিলাম। তখন তিনি বলবেন আল্লাহর যমীন কি প্রশস্ত ছিল না যে তুমি সেখানে হিযরত করবে। ইহারাই সেই লোক যাদের ঠিকানা হবে জাহান্নামের নিকৃষ্টতম স্থানে। কিন্তু পুরুষ ও নারী এবং বাচ্চাদের মধ্যে প্রকৃত অবস্থায় যারা কোন অবলম্বন তৈরীতে অক্ষম এবং মুক্তির কোন পথ খুঁজে পায়না, হতে পারে আল্লাহ তা’আলা তাদের ক্ষমা করে দিবেন। কেননা আল্লাহ হচ্ছেন অতি দয়ালু ্ও ক্ষমাশীল।” (সূরা নিসা আয়াত ৯৭-৯৯)।
ইমাম বুখারী (রহীমাহুল্লাহ) ইকরামা (রাদিআল্লাহু আনহু) এর সনদে বর্ণনা করেন যে, “আমাকে হযরত আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যামানায় কিছু সংখ্যক মুসলমান মুশরিকদের বস্তিতে বসবাস করতেন। ফলে মুশরিকদের সংখ্যাধিক্য মনে হচ্ছিল। সূতরাং মুসলমানগণ যখন তীর ছুড়ত তখন মুশরিকদের মাঝে অবস্থানরত মুসলমানদের গায়ে বিধত ফলে তারা আহত হয়ে অভিশপ্ত মৃত্যু মুখে লুটে পরত।”
এই পরিস্থিতিতে আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত অবতীর্ন করেন,
ফিরিশতা তাদের রূহ কব্জা করার সময় ঐ সকল লোক নিজেদের উপর জুলুমরত ছিল। এমনিভাবে কতিপয় মু’মীন যারা মক্কাতে অবস্থান করছিল অথচ তারা দ্বীনের উপর মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠত ছিল, কিন্তু তারা রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে হিজরত করেনি।
ফলে বদরের যুদ্ধের দিন কাফিরদের ভয়ে ও লজ্জায় তারা মাঠে বেরিয়ে আসে। এতে কাফিরদের দলের সংখ্যা ভারী হয়ে যায়। অতঃপর যুদ্ধে মুসলমানদের আঘাতে তাদের মধ্য হতে যারা মারা যায় বুখারী শরীফের বর্ণনানুযায়ী তারা জাহান্নামী সাব্যস্ত হয়েছে।
নিঃস্ব অসহায়দের এ পরিণতি জানার পর তাদের সম্পর্কে এখন আপনার মতামত কি?
যারা নামে মাত্র মুসলমান হওয়ার কারণে কাফিরদের অসহনীয় নির্যাতন সহ্য করছেন এবং চতুস্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্টমত মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছেন। যারা নিজেদের ইজ্জত, সম্মান ও সম্পদের দিকে লোভাতুর দৃষ্টি নিক্ষেপকারী ও হাত উদ্যতকারীর হাতকে ফিরিয়ে দিতে বা গুড়িয়ে দিতে পারেনা। এমনকি তাদের ঐ শক্তিও নেই যে, তাদেরকে যদি শাসক গোষ্ঠীর মনোরঞ্জনের জন্য নাবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাত “দাড়ি” কে কর্তন করতে বলে, তবে তারা তাদের মনোরঞ্জনের খাতিরে তা করতে বাধ্য অন্যথায় দাড়ি রাখার মাধ্যমে ইসলামের সাথে তার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ করার কারনে শাসকরা তাদের শক্রতে পরিনত হবে। শুধু তাই নয় তাদের অবস্থা এর চেয়েও আরো অধিকতর লাজুক তারা যদি শরীয়তের বিধানানুযায়ী নিজেদের স্ত্রীদের পোষাককে লম্বা করতে চায় এতেও তারা অক্ষম, কেননা এটাও তাদের দেশে এক ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ, যে অপরাধের কারণে তাদেরকে উল্টো করে লটকানো হয়। এছাড়াও তাদেরকে আরো বিভিন্ন রকমের শাস্তি প্রদান করা হয়। তাদের করুন পরিনতির এটাও একটি অংশ যে, তারা আল্লাহর ঘরে বসে তিনজন যুবককে একসাথে কুরআন শিক্ষা দিতে পারে না। কেননা তাদের দেশে এটা অবৈধ সমাবেশ, যা কিনা অমার্জনীর অপরাধ। এমন কি কিছু সংখ্যক ইসলামী রাষ্ট্রেও তারা নিজেদের স্ত্রীদের কেশ আবৃত করে রাখতে পারে না। আর না পারে সেই ইন্টেলিজেন্সের কুকুরগুলোকে নিজেদের অবলা যুবতী নারীর হাত ধরে নিয়ে যেতে বাধা দিতে। ধরনী আধারের চাদর মুড়ি দেওয়ার সাথে সাথে তাকে যেখানে খুশি সেখানে বল-পূর্বক টেনে হিঁছড়ে নিয়ে যায়। এ বেচারী হৃদয়ে মাজলূমিয়্যাতের পূর্বাকৃতি অংকন করা ও তার বাস্তবতার অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনা।
বিষয়টি যদি কোন লোক সুস্থ মস্তিস্কে চিন্তা করেন, তবে যথার্থই উপলব্ধি করতে পাবেন যে, এটা কেমন নিঃস্বতা?
তারা কি আল্লাহদ্রোহী শাসকদের কর্তৃক পরিচালিত কোন বিধানকে পালন করতে অস্বীকৃতি জানাতে পারবে? এমন আদেশ যা শুধুমাত্র স্বৈরাচারী শাসকদের মানুষ কামনা চরিতার্থ করতেই বলা হয়েছে। লাখ লাখ লোক কি এমনতর অপমানিত ও লাঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে না?
এমতাবস্থায় ফিরিশতারা যদি তাদের আত্মা কব্জা করে নেয় তবে প্রমাণিত হবে যে এরা নিজেরাই নিজেদের উপর অত্যাচারী।
ঐ সকল লোকদের একটু ভাবা উচিৎ যখন ফিরিশতা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবে, “তোমরা কোথায় ছিলে”? তখন তাদের উত্তর কি হবে? তখন তারা বলবে আমারা পৃথিবীতে নিঃস্ব, অসহায় ও অনাথ ছিলাম”। তাদের জেনে রাখা উচিৎ, দুর্বলতা আল্লাহর নিকট গ্রহনযোগ্য কোন উজর নয়। বরং এটা এমনই এক অপরাধ, যার শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম।
আল্লাহ শুধু ঐ সকল মানুষকে অক্ষম ও অপারগ স্বীকৃতি দিয়েছেন, যারা বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে পৌঁছেছেন অথবা অবুঝ শিশু এবং নারী। কেননা এ সকল মানুষ মুক্তির কোন পথ খুঁজে পায় না এবং সম্মানের পবিত্র ভূমির পথও চিনেনা। যারা না পারে দারুল ইসলামের দিকে হিজরত করতে আর না পারে জিহাদী কাফিলার সাথে সঙ্গ দিতে।
আমি পরিপূর্ণ দৃঢ়তা ও আস্থার সাথে বলছি যে, জিহাদ এবং জিহাদের দিকে হিজরত মূলত এই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ যার মধ্য হতে কোন অংশকে ধর্মের মৌলিকতা থেকে পৃথক করা যায় না। যে ধর্মের মধ্যে জিহাদ নেই বাস্তবে সে ধর্ম না পৃথিবীতে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে আর না ধর্মের পুস্পমালা প্রষ্ফুটিত করতে পারে।
বরং জিহাদই হচ্ছে ধর্মের মূল শক্তি। বিশ্ব স্রষ্টার কাছে যার মূল্যায়ন আছে অর্থাৎ জিহাদকে শুধু মাত্র ইসলাম প্রচার কালের প্রয়োজনীয়তা মনে করার কোনই অবকাশ নেই। বরং জিহাদ ঐ কাফেলার সার্বোক্ষণিক প্রয়োজনীয় উপাদান যারা ধর্মের চূড়ান্ত লক্ষ্যার্জনে সদা তৎপর।
উস্তাদ শাহীদ সাইয়্যেদ কুতুব (রহীমাহুল্লাহ) তাফসির ফি যিলালিল কুরআন এর দ্বিতীয় খন্ডের ৭৪২ পৃষ্ঠায় এ আয়াতের তাফসীরে লিখেন। জিহাদ যদি উম্মাতে মুসলিমার জীবনে আকম্মীক কোন প্রয়োজন হত তবে কুরআনুল কারীমের প্রতি পারাতে এত ব্যাপক হারে আলোচনা করা হত না। সুতরাং তাকে আকস্মিক প্রয়োজন কিভাবে সাব্যস্ত করা যেতে পারে?
বিশেষ করে যেখানে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করেছেন উৎসাহ উদ্দীপনা ও সস্তুষ্ট চিত্তে একাজ আঞ্জাম দেয়ার মাধ্যমে। যদি জিহাদ কোন পর্যায়ে আকষ্মিক প্রয়োজনই হত, তবে নাবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিয়ামাত অবধি আহূত সকল মুসলমানের জন্য এ অসিয়ত রেখে যেতেন না।
যে ব্যক্তি জীবনে কোনদিন যুদ্ধ করেনি এবং কখনো যুদ্ধের কল্পনাও করেনি, এমতাবস্থায় সে যদি মারা যায় তবে সে মুনাফিকের ন্যায় মৃত্যু বরণ করল ।
আল্লাহ তা’আলা খুব ভাল করেই জানতেই যে, জিহাদের এ বিধান রাজা বাদশাহদের নিকট অপছন্দ হবে, এবং ক্ষমতাধর শাসকরা এ বিধানের বিরোধীতা করবে। কেননা এ পদ্ধতি ও রীতি নীতি তাদের নিয়ম নীতি থেকে ভিন্ন।
এবং এ পদ্ধতি শুধু বর্তমান কালে নয় বরং এটা পৃথিবীর প্রত্যেক প্রান্তে মুসলিম জাতির সকল প্রজন্মে এবং প্রত্যেক যুগেও ভিন্নই ছিল। এবং ভবিষ্যতেও তাদের থেকে ভিন্ন ও তাদের বিরোধীই থাকবে।
মহা কৌশুলী ও মহা জ্ঞানী আল্লাহপাক একথা খুব ভালো করেই জানতেন যে, কুচরিত্রদের নিকট থেকে ভালো ও ন্যায় নীতির আশা করা বাতুলতা বৈ কিছুই নয়। কেননা তারা কল্যাণের চারা গাছকে এভাবে হেলে দুলে বড় হতে ও সজীব হতে দেখে ঈর্ষান্বিত হয়। শুধু তাই নয় বরং কল্যাণের বীজ বৃদ্ধি পাওয়াই দুষ্টদের অস্তিত্বের জন্যে বিপদের কারণ। এমনি ভাবে একক ভাবে সত্যর অস্তিত্বও বাতিলের জন্যে বিপদ সংকেত । যেমন পৃথিবীতে শাস্তি শৃংখলা ঠিক রাখার জন্যে এটা একান্ত প্রয়োজন যে প্রত্যেক দুষ্টই সত্যের শক্তির সম্মুখে নতশীর হবে। তেমনি ভাবে বাতিলের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্যে সত্যকে পৃথিবী থেকে চিরতরে মুছে দেয়ার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করাও সত্য।
এটা চির বাস্তব কথা
এটা সাময়িক চিত্র নয়
এটা জন্মগত সমস্যা
এটা ক্ষনস্থায়ী সমস্যা নয়।
অবস্থা যদি এমনি হয়ে থাকে তবে জিহাদের প্রয়োজনীয়তাও সু-স্পষ্ট। এবং এটাও দ্রুতসত্য যে, ধর্মের অস্তীত্ব রক্ষা করতে হলে জিহাদের এ শ্রোতধারাকে সর্বাবস্থায় সর্বকালে অব্যাহত রাখতে হবে। সুতরাং সশস্ত্র শক্রর মুকাবেলায় জিহাদ করার জন্যে এবং আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পঙ্গপালের ন্যায় ছুটে আসা বাহিনীর মুকাবেলা করার জন্যে হক্বের তরবারীকেও আরো চকচকে উজ্জল হতে হবে। অন্যথায় একাজ আত্ম হত্যায় পরিণত হবে। এবং তা এমন এক ঠাট্রা হবে যা মু’মিনের মহা চরিত্রের সাথে সোভা পায় না।
আমি শক্রকে কেন দিব উত্তম উপাধি
যদি সে হয়ে থাকে আমার উপর জুলুমকারী
আমার করনীয় হচ্ছে সর্বদা হুশিয়ারী
তার করনীয় জুলুম বিনে আর কি?...
[বিঃ দ্রঃ এই লিখনীটি শহীদ আব্দুল্লাহ আযযাম (আল্লাহ তা‘য়ালা উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন) এর লিখিত “এসো কাফেলা বদ্ধ হই” নামক কিতাব থেকে নেয়া হয়েছে]
সূত্রঃ https://203.211.136.155/ ~babislam/ showthread.php?t=8938
বন্ধুরা আমার,
আজ মুসলিম জাতির এ করুন পরিস্থিতির প্রতি দৃষ্টিপাতকারী যে কোন মানুষ অতি সহজেই অনুধাবন করতে সক্ষম হবে যে, মুসলমানদের এ দূরাবস্থার মূল হচ্ছে জিহাদ ছেড়ে দেয়া, যা হাদীসের ভাষায় দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট।
পথভ্রষ্ট জালিম শাসকরা আজ ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলমানদের ঘাড়ের উপর সওয়ার হয়ে বসে আছে। তার প্রকৃত কারণ হল কাফিরররা জিহাদ ছাড়া অন্য কিছুতে ভয় পায়না। আর তাইতো মুসলমানদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে আল্লাহ তা’আলা নির্দেশ করেনঃ
“আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর, যদিও তুমি নিজেকে ছাড়া অন্য কারো যিম্মাদার নও তথাপিও মু’মিনদেরকে জিহাদের প্রতি উদ্ভুদ্ধ কর, হয়তবা এর বিনিময়ে আল্লাহ তোমাদেরকে কাফিরদের কবল থেকে মুক্তি দিবেন, কেননা একমাত্র আল্লাহ তা’আলাই সর্ববৃহৎ বিপদদাতা, এবং দৃষ্টান্ত প্রদর্শন কারী।” (সূরা নিসা, আয়াত ৮৪)
আজ আমরা বিশ্বের সকল মুসলমানদের জিহাদের পথে আহ্বান করছি এবং জিহাদের মাঠে যে তাদেরই আগমনের অপেক্ষা করছি, এর বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তার মধ্যে কতিপয় কারণ এই যে,
১। কুফুরী শাসন ব্যবস্থার মূলোৎপাটন করা।
২। যোগ্য লোকের অভাব।
৩। জাহান্নামের আগুনের ভয়।
৪। ফারজিয়্যাত আদায়ের লক্ষ্যে আল্লাহ তা’আলার আহ্বানে সাড়া দেয়া।
৫। সালাফে সালেহীনের পদাষ্ক অনুসরণ করা।
৬। সূ-দৃঢ় ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দুর্ধর্ষ একটি জানবাজ বাহিনী গঠন করা।
৭। পৃথিবীর নিঃস্ব, অসহায়, মজলুমানদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।
৮। শাহাদাতের সুমহান মর্যাদা লাভের আশায়।
৯। জিহাদ ইজ্জতের রক্ষা কবজ।
১০। জিহাদ প্রভাব প্রতিপত্তি রক্ষার শেষ তুনীর।
১১। জিহাদ ধ্বংস যজ্ঞ থেকে রক্ষাকারী এবং পৃথিবীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
১২। শাস্তি থেকে মুক্তির আশা।
১৩। জিহাদ রিযিক অর্জনের পথ।
১৪। জিহাদ ইসলামী স্থাপত্বের শীর্ষ চূড়া।
১৫। জিহাদই সর্বোত্তম ইবাদাত।
১ম কারণঃ কুফরী শাসন ব্যবস্থার মূলোৎপাটন করার জন্য।
“ফিৎনা শেষ হওয়া পর্যন্ত তাদের সাথে যুদ্ধ কর, যতক্ষণ না পরিপূর্ণভাবে দ্বীন আল্লাহর জন্যে হয়ে যায়, অতঃপর যদি তারা ফিরে আসে তবে আল্লাহ তা’আলা তাদের সকল কাজ প্রত্যক্ষ করছেন।” (সূরা আনফাল, আয়াত ৩৯)।
অতএব এ আয়াত দ্বারা বুঝা গেল যে, জিহাদ বন্ধ হয়ে গেলে সকল ক্ষমতা ও নেতৃত্ব কাফিরদের হাতে চলে যায় এবং ফিৎনা ফাসাদের বিস্তার ঘটতে থাকে, যা মূলত র্শিক।
২য় কারনঃ যোগ্য লোকের অভাব।
বর্তমানে ইসলামী বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসিবত হচ্ছে এমন যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষের অভাব যারা দায়িত্ব পালনে সক্ষম এবং উম্মাতের পেরেশানী দূরিভূত করতে পারে।
সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে যে, “মানুষের উদাহরণ হচ্ছে এমন শত কোটি উটের মত যার মধ্যে একটি সওয়ারী পাওয়াও দুষ্কর।”
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিআল্লাহু আনহু) হতে বর্নিত, একদা তিনি সাহাবায়ে কেরাম (রাদিআল্লাহু আনহু) দেরকে বললেন যে, “তোমরা সকলেই আকাংখা কর”। অতঃপর, প্রত্যেকেই কিছু না কিছু আকাংখা করলেন, অতঃপর তাঁরা বললেন, “হে আমীরুল মু’মিনীন এবার আপনি আকাংখা করুন।” তিনি বললেন আমার আকাংখা যে, “আমার কাছে আবু উবায়দার মত সম্পদে পরিপূর্ণ একটি ঘর হোক।” অর্থাৎ আমিও আবু উবায়দার মত প্রচুর অর্থ সম্পদ ব্যয় করে জিহাদে সাহায্যকারী, গোলামদের মুক্তিকারী এবং সম্পদকে কল্যাণের কাজে ব্যয়কারী হতে চাই।
একদা আমি কুরআনের এক জলসার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, যে মজমায় বহু দুর থেকে ইজ্জত, বুজুর্গী বরকত ও নিয়ামাতের যমীনের দিকে আগমনকারী কিছু আরব তরুন বসা ছিল। (এখানে আমার উদ্দেশ্য আফগান জিহাদে আগমনকারী আরবগণ)
আমি সেই সকল তরুণদের চেহারার দিকে লক্ষ্য করলাম এই জন্যে যে, যদি তাদের মাঝে কোন উত্তম তিলাওয়াতকারী থাকে তবে তাকে এ জলসার আমীর বানিয়ে দিব। কিন্তু আমাকে বড়ই পরিতাপের সহিত বলতে হচ্ছে যে, আমি তাদের মাঝে এমন একজনও পাইনি। এমতাবস্থায় আমি আর একথা না বলে পারছিনা যে, আমরা আমাদের জাতির সাথে ইনসাফ করিনি। একথাটি নাবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ সময় বলেছিলেন, যখন তার চোখের সামনে সাতজন সাহাবী শাহাদাতের অমিয় শুধা পান করে শাহীদ হন।
আমাদের ছাত্র সমাজ ও মুবাল্লিগীনের পক্ষ হতে এ পথের দিকে আগমনের ঐ রকম উৎসাহ পরিলক্ষিত হয়নি, যেমনটি আমরা তাদের ঈমান ও আখলাক থেকে আশা করেছিলাম্ বরং এদের মাঝে এর বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অনেক আবেগের অশ্বারোহীদেরকে এমন পরামর্শ দিতে দেখা গেছে যে, তারা যেন তাদের নিজেদের শহরেই অপেক্ষা করতে থাকে। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, নিজ শহরে তারা জালিম শাসকের বিরুদ্ধে ওষ্ঠদ্বয় নেড়ে একটি কথা বের করতেও সক্ষম নয়। তাছাড়া তাদের মধ্যে কেউ কেউ বোকার মত না জেনে একতরফা প্রচার করছে যে, আফগানিস্তানে মানুষের প্রয়োজন নেই বরং প্রয়োজনিয়তা রয়েছে মালের (অর্থ-কড়ির)। আমি আমার এই ক্ষুদ্র জীবনের আফগান অতিবাহিত দিন ও রাত্রি সমূহের শপথ করে বলছি যে, আমি আফগানিস্তানে যতটা সম্পদের সংকট পেয়েছি তারচেয়ে বহুগুন বেশী প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছি যোগ্য কর্মীর আর মুবাল্লীগের প্রয়োজনীয়তা তো অপরিসীম। হ্যাঁ আমি একথা বলছি যে, এমন সংকটময় অবস্থায় মুজাহিদীনদের মাঝে আমি সুদীর্ঘ ছয়টি বছর অতিবাহিত করার পর এ কথার সত্যতা উপলব্ধি করতে পেরেছি। আমার কথা যদি আপনাদের বিশ্বাস না হয়, তাহলে আসুন আফগানিস্তানের পাহাড়ী উপত্তকায় একবার ঘুরে দেখে যান।
সেখানে আপনি দেখতে পাবেন যে, এমনও এলাকা রয়েছে যেখানে হন্যে হয়ে খোঁজার পরও সুন্দর ভাবে কুরআন তিলাওয়াতকারী একজন লোকেরও সন্ধান পাওয়া যাবে না।
চলুন আমার সাথে অন্য এলাকাতে, তাহলে আপনি জানতে পারবেন যে ঐ বিশাল এলাকাতে একজন লোকও জানাজার নামাজ পড়াতে জানেনা এবং আফগান মুজাহিদীনগন জানাজার নামাজ পড়াতে সক্ষম এমন একজন আলিমের সন্ধানে হন্যে হয়ে ফিরছে। আবার কখনো নিজেদের কাঁধে শাহীদদের লাশ উঠিয়ে মাইলকে মাইল সফর করতে বাধ্য হচ্ছে।
অনুরূপভাবে জিহাদের ফিকহি আহকাম, যার দ্বারা গনিমতের মাল বন্টন, বন্দিদের সাথে আচার ব্যবহার ইত্যাদি ছাড়াও এরকম অসংখ্য বিষয়ে শারীয়াতের বিধানাবলী স্পষ্ট না জানার কারণে মুজাহিদীনগন দূর-দূরান্তের উলামায়ে কিরামদের সাথে সম্পর্কে স্থাপনে বাধ্য হচ্ছে। যেন তারা এ বিধানাবলী জেনে সে অনুযায়ী আমল করতে পারে।
এবং সেখানে সহজ, সরল নম্র-ভদ্র, ধৈর্য্যশীল, ধর্ম ভীরু, সাধাসিধে জিহাদী চেতনা সম্পন্ন আরব তরুনদের সাক্ষাত মিলছে। তারা নিজ নিজ ফ্রন্টে এমন বিচক্ষণতা ও দূর-দর্শিতার প্রমাণ পেশ করছেন যা কিনা উচ্চ শিক্ষিতদের থেকেও পাওয়া দুরুহ ব্যাপার। অথচ তাদের অনেকেই শুধুমাত্র মেট্রিক পাশ ছিলেন।
আমার যথেষ্ট ইচ্ছা থাকা সত্বেও এখানে স্বল্পপরিসরে সকল ঘটনা উল্লেখ করতে সক্ষম নই আর এটা সম্ভবও নয়। আমি শুধুমাত্র উপমা স্বরূপ আব্দুল্লাহ, আনাছ, আবু দাজানা, আবু আছিম, আবু তাহির এ সকল মুজাহীদগনের নাম উল্লেখ করব। আর যদি আপনাদের আবু শোয়াইব উম্মীউল আরাবী সম্পর্কে ঐ সকল ঘটনাবলি জানাই যা পাগমানের ইতিহাসের সোঁনালী অধ্যায়ে খোদিত থাকবে চিরকাল; তবে আপনি পাথরের ন্যায় স্তব্ধ হয়ে যাবেন এবং আপনার পঞ্চ ইন্দ্রীয়ের কার্য বন্ধ হয়ে যাবে। এ ঘটনা যদি আপনি দাড়িয়ে শুনেন তবে দাড়িয়েই থাকবেন আর যদি বসে শুনেন তবে বসেই থাকবেন, যা শুনে আপনার বাক শক্তি হারিয়ে যাবে, তথাপিও আপনাদের কিংকর্তব্য বিমূখতার সমাপ্তি ঘটবেনা।
আমাদের আজও ঐ সকল ভাইদের নিকট অনেক আশা-ভরসা, যারা অদ্যবধি সামাজিক বন্ধন থেকে মুক্তি পাননি এবং স্বীয় গর্দান থেকে গোলামীর জিঞ্জির খুলে ছুড়ে মারতে পারিনন্ িযারা ধোঁকাবাজ পাশ্চাত্য আক্রমণের কারণে সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় চাপে জর্জরিত।
ঐ সকল ভাইদের কাছে আমার এটুকুই আকুতি যে, যদি তারা পরিবারিক ও সামাজিকতার শিকল ভেঙ্গে আমাদের দিকে আসতে না পারেন তবে তারা অবশ্যই যেন আমাদের জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করেন। হে আল্লাহ যে পবিত্র ভূমিতে শাহীদদের আত্মা উড়তে থাকে, দৌড়-ঝাপ ও সাতাঁর কাটতে থাকে, তাদের তুমি স্বশরীরে সেই পবিত্র ভুমিতে উপস্থিত করে দাও।
কোন একদিন আমি কাজী মজলুমকে বললাম যে, আমাদেরকে ক্বারী আছিমের জীবন বৃত্তান্ত আলোচনা করে শুনান, তিনি আপনাদের মধ্য হতে সবেমাত্র শাহীদ হয়েছেন।
কাজী মজলুম বলতে শুরু করলেন। আমি প্রভাব-প্রতিপত্তি, গাম্ভীর্যতা, দৃঢ়তা ও দুঃসাহসীকতায় এমন দ্বিতীয় ব্যক্তির সাক্ষ্যৎ পাইনি, যার প্রভাবের কারণে আমাদের কেহ তার সাথে কথা বলতেও সাহস করত না এবং তার সামনে কেহ পা মেলে বসারও হিম্মত করত না, আর ঠাট্রা-মস্করা তো দূরের কথা।
বন্ধু আমার, এমন ব্যক্তি সম্পর্কে আমি উক্তি করব, যিনি হচ্ছেন অগাধ শ্রদ্ধার পাত্র। আকাশচুম্বি সম্মানী ও কর্মঠ ব্যক্তিত্ব। তিনি শুধুমাত্র মেট্রিক পাশ ছিলেন। তাঁর বয়স ২৩ বছর ছিল এবং তিনি শুধু কুরআনে হাফিজ ছিলেন।
বর্তমানে পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক ও ঘোলাটে হয়ে গেছে-তাই আমাদেরকে ক্বারী আছিমের মত দৃঢ়চেতা ঈমানের অধিকারী হতে হবে। হতে হবে নির্ভিক বাহাদুর। তবেই আমরা অর্জন করব ব্যাপক কার্যক্ষমতা, তবেই আমরা সক্ষম হব মুসলমানদের বড় বড় সমস্য সমূহ সমাধানে ।
তয় কারণঃ “জাহান্নামের আগুনের ভয়”।
আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেন,
“যদি তোমরা জিহাদের জন্যে বের না হও তবে তিনি তোমাদেরকে বেদনা দায়ক শাস্তি দিবেন এবং তোমাদের স্থলে অন্য একটি জাতিকে অধিষ্ঠিত করবেন আর তোমরা তার কোন ক্ষতিই করতে পাবেনা, আল্লাহ সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।” (সূরা তাওবা আয়াত ৩৯)
ইবনু আরাবী বলেন, বেদনা দায়ক শাস্তি হিসেবে দুনিয়াতে এমন করা হবে যে, মুসলমানদের শক্রকে মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দেয়া হবে এবং পরকালে জিহাদের হুকুম অমান্যকারীদের জাহান্নামে পাঠানো হবে।
তাফসীরে কুরতুবী খঃ ৮, ১৪২ পৃষ্ঠায় ইমাম কুরতুবী বলেন, এই আয়াতের দ্বারা উদ্দেশ্য হল যে, কোন কোন সময় কুফুরী শক্তির বাহুবল ও অর্থবল এত বেশী হবে যে, সে অবস্থায় “নফীরে আম” ওয়াজিব হয়ে যাবে।
আল্লাহ তা’আলা অন্যত্র বলেন ,
“যখন ফিরিশতা তাদের আত্মাকে কব্জা করবে এমতাবস্থায় যে, তারা নিজেদের উপর অত্যাচার করছে তখন তিনি তাদের প্র্শ্ন করবেন যে, তোমরা কোথায় ছিলে? জবাবে তারা বলবে আমরা পৃথিবীতে অসহায় এবং মজলুম ছিলাম। তখন তিনি বলবেন আল্লাহর যমীন কি প্রশস্ত ছিল না যে তুমি সেখানে হিযরত করবে। ইহারাই সেই লোক যাদের ঠিকানা হবে জাহান্নামের নিকৃষ্টতম স্থানে। কিন্তু পুরুষ ও নারী এবং বাচ্চাদের মধ্যে প্রকৃত অবস্থায় যারা কোন অবলম্বন তৈরীতে অক্ষম এবং মুক্তির কোন পথ খুঁজে পায়না, হতে পারে আল্লাহ তা’আলা তাদের ক্ষমা করে দিবেন। কেননা আল্লাহ হচ্ছেন অতি দয়ালু ্ও ক্ষমাশীল।” (সূরা নিসা আয়াত ৯৭-৯৯)।
ইমাম বুখারী (রহীমাহুল্লাহ) ইকরামা (রাদিআল্লাহু আনহু) এর সনদে বর্ণনা করেন যে, “আমাকে হযরত আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যামানায় কিছু সংখ্যক মুসলমান মুশরিকদের বস্তিতে বসবাস করতেন। ফলে মুশরিকদের সংখ্যাধিক্য মনে হচ্ছিল। সূতরাং মুসলমানগণ যখন তীর ছুড়ত তখন মুশরিকদের মাঝে অবস্থানরত মুসলমানদের গায়ে বিধত ফলে তারা আহত হয়ে অভিশপ্ত মৃত্যু মুখে লুটে পরত।”
এই পরিস্থিতিতে আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত অবতীর্ন করেন,
ফিরিশতা তাদের রূহ কব্জা করার সময় ঐ সকল লোক নিজেদের উপর জুলুমরত ছিল। এমনিভাবে কতিপয় মু’মীন যারা মক্কাতে অবস্থান করছিল অথচ তারা দ্বীনের উপর মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠত ছিল, কিন্তু তারা রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে হিজরত করেনি।
ফলে বদরের যুদ্ধের দিন কাফিরদের ভয়ে ও লজ্জায় তারা মাঠে বেরিয়ে আসে। এতে কাফিরদের দলের সংখ্যা ভারী হয়ে যায়। অতঃপর যুদ্ধে মুসলমানদের আঘাতে তাদের মধ্য হতে যারা মারা যায় বুখারী শরীফের বর্ণনানুযায়ী তারা জাহান্নামী সাব্যস্ত হয়েছে।
নিঃস্ব অসহায়দের এ পরিণতি জানার পর তাদের সম্পর্কে এখন আপনার মতামত কি?
যারা নামে মাত্র মুসলমান হওয়ার কারণে কাফিরদের অসহনীয় নির্যাতন সহ্য করছেন এবং চতুস্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্টমত মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছেন। যারা নিজেদের ইজ্জত, সম্মান ও সম্পদের দিকে লোভাতুর দৃষ্টি নিক্ষেপকারী ও হাত উদ্যতকারীর হাতকে ফিরিয়ে দিতে বা গুড়িয়ে দিতে পারেনা। এমনকি তাদের ঐ শক্তিও নেই যে, তাদেরকে যদি শাসক গোষ্ঠীর মনোরঞ্জনের জন্য নাবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাত “দাড়ি” কে কর্তন করতে বলে, তবে তারা তাদের মনোরঞ্জনের খাতিরে তা করতে বাধ্য অন্যথায় দাড়ি রাখার মাধ্যমে ইসলামের সাথে তার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ করার কারনে শাসকরা তাদের শক্রতে পরিনত হবে। শুধু তাই নয় তাদের অবস্থা এর চেয়েও আরো অধিকতর লাজুক তারা যদি শরীয়তের বিধানানুযায়ী নিজেদের স্ত্রীদের পোষাককে লম্বা করতে চায় এতেও তারা অক্ষম, কেননা এটাও তাদের দেশে এক ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ, যে অপরাধের কারণে তাদেরকে উল্টো করে লটকানো হয়। এছাড়াও তাদেরকে আরো বিভিন্ন রকমের শাস্তি প্রদান করা হয়। তাদের করুন পরিনতির এটাও একটি অংশ যে, তারা আল্লাহর ঘরে বসে তিনজন যুবককে একসাথে কুরআন শিক্ষা দিতে পারে না। কেননা তাদের দেশে এটা অবৈধ সমাবেশ, যা কিনা অমার্জনীর অপরাধ। এমন কি কিছু সংখ্যক ইসলামী রাষ্ট্রেও তারা নিজেদের স্ত্রীদের কেশ আবৃত করে রাখতে পারে না। আর না পারে সেই ইন্টেলিজেন্সের কুকুরগুলোকে নিজেদের অবলা যুবতী নারীর হাত ধরে নিয়ে যেতে বাধা দিতে। ধরনী আধারের চাদর মুড়ি দেওয়ার সাথে সাথে তাকে যেখানে খুশি সেখানে বল-পূর্বক টেনে হিঁছড়ে নিয়ে যায়। এ বেচারী হৃদয়ে মাজলূমিয়্যাতের পূর্বাকৃতি অংকন করা ও তার বাস্তবতার অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনা।
বিষয়টি যদি কোন লোক সুস্থ মস্তিস্কে চিন্তা করেন, তবে যথার্থই উপলব্ধি করতে পাবেন যে, এটা কেমন নিঃস্বতা?
তারা কি আল্লাহদ্রোহী শাসকদের কর্তৃক পরিচালিত কোন বিধানকে পালন করতে অস্বীকৃতি জানাতে পারবে? এমন আদেশ যা শুধুমাত্র স্বৈরাচারী শাসকদের মানুষ কামনা চরিতার্থ করতেই বলা হয়েছে। লাখ লাখ লোক কি এমনতর অপমানিত ও লাঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে না?
এমতাবস্থায় ফিরিশতারা যদি তাদের আত্মা কব্জা করে নেয় তবে প্রমাণিত হবে যে এরা নিজেরাই নিজেদের উপর অত্যাচারী।
ঐ সকল লোকদের একটু ভাবা উচিৎ যখন ফিরিশতা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবে, “তোমরা কোথায় ছিলে”? তখন তাদের উত্তর কি হবে? তখন তারা বলবে আমারা পৃথিবীতে নিঃস্ব, অসহায় ও অনাথ ছিলাম”। তাদের জেনে রাখা উচিৎ, দুর্বলতা আল্লাহর নিকট গ্রহনযোগ্য কোন উজর নয়। বরং এটা এমনই এক অপরাধ, যার শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম।
আল্লাহ শুধু ঐ সকল মানুষকে অক্ষম ও অপারগ স্বীকৃতি দিয়েছেন, যারা বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে পৌঁছেছেন অথবা অবুঝ শিশু এবং নারী। কেননা এ সকল মানুষ মুক্তির কোন পথ খুঁজে পায় না এবং সম্মানের পবিত্র ভূমির পথও চিনেনা। যারা না পারে দারুল ইসলামের দিকে হিজরত করতে আর না পারে জিহাদী কাফিলার সাথে সঙ্গ দিতে।
আমি পরিপূর্ণ দৃঢ়তা ও আস্থার সাথে বলছি যে, জিহাদ এবং জিহাদের দিকে হিজরত মূলত এই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ যার মধ্য হতে কোন অংশকে ধর্মের মৌলিকতা থেকে পৃথক করা যায় না। যে ধর্মের মধ্যে জিহাদ নেই বাস্তবে সে ধর্ম না পৃথিবীতে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে আর না ধর্মের পুস্পমালা প্রষ্ফুটিত করতে পারে।
বরং জিহাদই হচ্ছে ধর্মের মূল শক্তি। বিশ্ব স্রষ্টার কাছে যার মূল্যায়ন আছে অর্থাৎ জিহাদকে শুধু মাত্র ইসলাম প্রচার কালের প্রয়োজনীয়তা মনে করার কোনই অবকাশ নেই। বরং জিহাদ ঐ কাফেলার সার্বোক্ষণিক প্রয়োজনীয় উপাদান যারা ধর্মের চূড়ান্ত লক্ষ্যার্জনে সদা তৎপর।
উস্তাদ শাহীদ সাইয়্যেদ কুতুব (রহীমাহুল্লাহ) তাফসির ফি যিলালিল কুরআন এর দ্বিতীয় খন্ডের ৭৪২ পৃষ্ঠায় এ আয়াতের তাফসীরে লিখেন। জিহাদ যদি উম্মাতে মুসলিমার জীবনে আকম্মীক কোন প্রয়োজন হত তবে কুরআনুল কারীমের প্রতি পারাতে এত ব্যাপক হারে আলোচনা করা হত না। সুতরাং তাকে আকস্মিক প্রয়োজন কিভাবে সাব্যস্ত করা যেতে পারে?
বিশেষ করে যেখানে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করেছেন উৎসাহ উদ্দীপনা ও সস্তুষ্ট চিত্তে একাজ আঞ্জাম দেয়ার মাধ্যমে। যদি জিহাদ কোন পর্যায়ে আকষ্মিক প্রয়োজনই হত, তবে নাবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিয়ামাত অবধি আহূত সকল মুসলমানের জন্য এ অসিয়ত রেখে যেতেন না।
যে ব্যক্তি জীবনে কোনদিন যুদ্ধ করেনি এবং কখনো যুদ্ধের কল্পনাও করেনি, এমতাবস্থায় সে যদি মারা যায় তবে সে মুনাফিকের ন্যায় মৃত্যু বরণ করল ।
আল্লাহ তা’আলা খুব ভাল করেই জানতেই যে, জিহাদের এ বিধান রাজা বাদশাহদের নিকট অপছন্দ হবে, এবং ক্ষমতাধর শাসকরা এ বিধানের বিরোধীতা করবে। কেননা এ পদ্ধতি ও রীতি নীতি তাদের নিয়ম নীতি থেকে ভিন্ন।
এবং এ পদ্ধতি শুধু বর্তমান কালে নয় বরং এটা পৃথিবীর প্রত্যেক প্রান্তে মুসলিম জাতির সকল প্রজন্মে এবং প্রত্যেক যুগেও ভিন্নই ছিল। এবং ভবিষ্যতেও তাদের থেকে ভিন্ন ও তাদের বিরোধীই থাকবে।
মহা কৌশুলী ও মহা জ্ঞানী আল্লাহপাক একথা খুব ভালো করেই জানতেন যে, কুচরিত্রদের নিকট থেকে ভালো ও ন্যায় নীতির আশা করা বাতুলতা বৈ কিছুই নয়। কেননা তারা কল্যাণের চারা গাছকে এভাবে হেলে দুলে বড় হতে ও সজীব হতে দেখে ঈর্ষান্বিত হয়। শুধু তাই নয় বরং কল্যাণের বীজ বৃদ্ধি পাওয়াই দুষ্টদের অস্তিত্বের জন্যে বিপদের কারণ। এমনি ভাবে একক ভাবে সত্যর অস্তিত্বও বাতিলের জন্যে বিপদ সংকেত । যেমন পৃথিবীতে শাস্তি শৃংখলা ঠিক রাখার জন্যে এটা একান্ত প্রয়োজন যে প্রত্যেক দুষ্টই সত্যের শক্তির সম্মুখে নতশীর হবে। তেমনি ভাবে বাতিলের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্যে সত্যকে পৃথিবী থেকে চিরতরে মুছে দেয়ার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করাও সত্য।
এটা চির বাস্তব কথা
এটা সাময়িক চিত্র নয়
এটা জন্মগত সমস্যা
এটা ক্ষনস্থায়ী সমস্যা নয়।
অবস্থা যদি এমনি হয়ে থাকে তবে জিহাদের প্রয়োজনীয়তাও সু-স্পষ্ট। এবং এটাও দ্রুতসত্য যে, ধর্মের অস্তীত্ব রক্ষা করতে হলে জিহাদের এ শ্রোতধারাকে সর্বাবস্থায় সর্বকালে অব্যাহত রাখতে হবে। সুতরাং সশস্ত্র শক্রর মুকাবেলায় জিহাদ করার জন্যে এবং আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পঙ্গপালের ন্যায় ছুটে আসা বাহিনীর মুকাবেলা করার জন্যে হক্বের তরবারীকেও আরো চকচকে উজ্জল হতে হবে। অন্যথায় একাজ আত্ম হত্যায় পরিণত হবে। এবং তা এমন এক ঠাট্রা হবে যা মু’মিনের মহা চরিত্রের সাথে সোভা পায় না।
আমি শক্রকে কেন দিব উত্তম উপাধি
যদি সে হয়ে থাকে আমার উপর জুলুমকারী
আমার করনীয় হচ্ছে সর্বদা হুশিয়ারী
তার করনীয় জুলুম বিনে আর কি?...
[বিঃ দ্রঃ এই লিখনীটি শহীদ আব্দুল্লাহ আযযাম (আল্লাহ তা‘য়ালা উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন) এর লিখিত “এসো কাফেলা বদ্ধ হই” নামক কিতাব থেকে নেয়া হয়েছে]
সূত্রঃ https://203.211.136.155/
No comments:
Post a Comment