সাবিলুনা আল জিহাদ
প্রসংঙ্গ:
এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য মিশর এর দিকে নজর রাখছি। সেখানে গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়া দল শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা করবে বলে ভোট চেয়েছিল এবং ভোট পেয়েছে। তারা যদি পারে তাহলে বোঝা যাবে পারা যাবে। তবে আমার মনে হয় গণতন্ত্র যদি বাতিল হয় তাইলে এটা দ্বারা হক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা মানে ময়লা কাপড় দিয়ে কোন কিছু পরিষ্কার করআর চেষ্টা।
- প্রথমত: মিশরের ইখওয়ানুল মুসলিমিন একটা তথাকথিত ইসলামি সংগঠন যারা গনতন্ত্রের মতো কুফরি কে ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যম হিসাবে ধরে নিয়েছে। গনতন্ত্র হারাম এ বিষয়ে কোরআন এর স্পস্ট আয়াত রয়েছে আর এ ব্যাপারে বর্তমান যুগের হক পন্থি সকল আলেমরাই একমত। কিছু দলিল নিম্নরুপ-
অতএব, তোমরা মানুষকে ভয় করো না এবং আমাকে ভয় কর এবং আমার আয়াত সমূহের বিনিময়ে স্বল্পমূল্যে গ্রহণ করো না, যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফের।
আল মায়দাহ:৪৪
আমি এ গ্রন্থে তাদের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চক্ষুর বিনিময়ে চক্ষু, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং যখম সমূহের বিনিময়ে সমান যখম। অতঃপর যে ক্ষমা করে, সে গোনাহ থেকে পাক হয়ে যায়। যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই জালেম।
আল মায়দাহ:৪৫
ইঞ্জিলের অধিকারীদের উচিত, আল্লাহ তাতে যা অবতীর্ণ করেছেন। তদানুযায়ী ফয়সালা করা। যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই পাপাচারী।
আল মায়দাহ:৪৭
আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি সত্যগ্রন্থ, যা পূর্ববতী গ্রন্থ সমূহের সত্যায়নকারী এবং সেগুলোর বিষয়বস্তুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। অতএব, আপনি তাদের পারস্পারিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করুন এবং আপনার কাছে যে সৎপথ এসেছে, তা ছেড়ে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না। আমি তোমাদের প্রত্যেককে একটি আইন ও পথ দিয়েছি। যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে তোমাদের সবাইকে এক উম্মত করে দিতেন, কিন্তু এরূপ করেননি-যাতে তোমাদেরকে যে ধর্ম দিয়েছেন, তাতে তোমাদের পরীক্ষা নেন। অতএব, দৌড়ে কল্যাণকর বিষয়াদি অর্জন কর। তোমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। অতঃপর তিনি অবহিত করবেন সে বিষয়, যাতে তোমরা মতবিরোধ করতে।
আল মায়দাহ:৪৮
আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি সত্যগ্রন্থ, যা পূর্ববতী গ্রন্থ সমূহের সত্যায়নকারী এবং সেগুলোর বিষয়বস্তুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। অতএব, আপনি তাদের পারস্পারিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করুন এবং আপনার কাছে যে সৎপথ এসেছে, তা ছেড়ে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না। আমি তোমাদের প্রত্যেককে একটি আইন ও পথ দিয়েছি। যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে তোমাদের সবাইকে এক উম্মত করে দিতেন, কিন্তু এরূপ করেননি-যাতে তোমাদেরকে যে ধর্ম দিয়েছেন, তাতে তোমাদের পরীক্ষা নেন। অতএব, দৌড়ে কল্যাণকর বিষয়াদি অর্জন কর। তোমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। অতঃপর তিনি অবহিত করবেন সে বিষয়, যাতে তোমরা মতবিরোধ করতে।
আল মায়দাহ:৪৮
আর আমি আদেশ করছি যে, আপনি তাদের পারস্পরিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী ফয়সালা করুন; তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না এবং তাদের থেকে সতর্ক থাকুন-যেন তারা আপনাকে এমন কোন নির্দেশ থেকে বিচ্যুত না করে, যা আল্লাহ আপনার প্রতি নাযিল করেছেন। অনন্তর যদি তার মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে নিন, আল্লাহ তাদেরকে তাদের গোনাহের কিছু শাস্তি দিতেই চেয়েছেন। মানুষের মধ্যে অনেকেই নাফরমান।
আল মায়দাহ:৪৯
উপরোক্ত আয়াত গুলো পর্যবেক্ষন
করলে যে দুইটি জিনিস পাওয়া যায়:
১. মানষের বানানো আইন দিয়ে শাসন
করা কুফরি। যা ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়। আর গনতন্ত্র মানেই মানব রচিত আইন। আল্লাহ
ছাড়া কারো আই প্রনয়নের ক্ষমতা নেই। “নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের উপর অধিষ্টিত হয়েছেন। তিনি পরিয়ে দেন রাতের উপর দিনকে এমতাবস্থায় যে, দিন দৌড়ে রাতের পিছনে আসে। তিনি সৃষ্টি করেছেন সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্র দৌড় স্বীয় আদেশের অনুগামী। শুনে রেখ, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। আল্লাহ, বরকতময় যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।” আল
আরাফ: ৫৪।
২. মানুষের প্রবৃত্তির অনুসরন
করা আর তা দ্বারা বিচার ফয়সালা করা কোরাআনে স্পষ্টত হারাম আর শিরক। “আল্লাহ অমুখাপেক্ষী” আল ইখলাছ:২ । অত:পর
মানুষের ফয়সালার জন্য অপেক্ষা করা বড়ই কঠিন বিষয়। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।
প্রসংঙ্গ:
সরাসরি
যুদ্ধ- সৎকাজে আদেশ এবং অসৎকাজে নিষেধ এর একটি মাধ্যম, একমাত্র মাধ্যম নয়। যেহেতু
মুসলমানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরা, অন্যায় ভাবে কাওকে হত্যা করা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করা
বা বান্দার হক নষ্ট করা একেকটা বিশাল বড় বড় গুনাহ, সেহেতু সরাসরি যুদ্ধের নিয়ম বা
যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদেরও যোগ্যতাও গুরুত্নপুর্ন বিষয়। সরাসরি যুদ্ধের ভয়াবহতা আছে।
বুকের মধ্যে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার প্রক্রিয়া, রন্ধ্রে রন্ধ্রে আল্লাহ্ কে সন্তুষ্ট
করার বাসনা না থাকলে জিহাদের ময়দানে অন্যায় ভাবে মানুষ খুন করা বা বান্দার হক নষ্ট
করার মত গুনাহ সংগঠিত হতে পারে।
সরাসরি যুদ্ধ- সৎকাজে আদেশ এবং
অসৎকাজে নিষেধ ছাড়া আর কি মাধ্যম আছে তা জানালে বিষয়টা ব্যাখ্যা করতে আরো সুবিধা হতো।
বস্তুত: এক আল্লাহ, এক রাসুল, এক কোরআন আর একমাত্র জীবন ব্যাবস্থা ইসলাম হওয়ার পরও
সিরাতুল মুস্তাকিম এর বাইরে একাধিক পথ থাকাটা কোরআন সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক।
ফিৎনা ফাসাদ হত্যার চেয়ে জঘন্য
আয়াতটা কোরআন এর সুরা বাকারাহর ২১৭ নং আয়াত এ বলা আছে। আয়াতটার তাফসির পড়লে আশা করি
কারো কোন সন্দেহ থাকার কথা না। শুধুমাত্র বাহ্যিকভাবে আয়াত পড়ে সিদ্ধান্ত নেয়াটা অতিব
মারাত্মক কাজ। এই আয়াত দ্বারা কাফের মুশরিকদের হত্যা করাকে উৎসাহিত এবং যুক্তিযুক্ত করা হয়েছে। কারণ তারা “ফিতনাহ”(শিরক
সবচেয়ে বড় ফিতনাহ) করে আর তাদের হত্যা করা অবশ্যই যুক্তিযুক্ত। তাফসির ইবন কাসিরের
সুরা বাকারাহর ২১৭ নং আয়াত এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
প্রসংগ
যে
উম্মাহর মধ্যে সকালের ঘুম থেকে উঠার কষ্ট, দাড়ি রাখার কারনে তিরস্কৃত হওয়ার কষ্ট
বা ইসলামিক পোষাক পরার কারনে আর্থিক ক্ষতির কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতার অভাব থাকে তাদেরকে
নিয়ে দিনের পর দিন যুদ্ধের ভয়াবহতা সহ্য করা, শরীরের মধ্যে বুলেট নিয়ে আল্লাহর উপর
সন্তুষ্ট থাকাটা একটু কঠিন। মুসলমান যদি মুসলমান কি জিনিস না জানে তাইলে সে কোন আত্নবিশাস
নিয়ে যুদ্ধ করবে ?
যে
পরিমান খাদ্য পেটে থাকলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নামায পড়া যায় বা নামাযে মনো সংযোগ
করা যায় এ পরিমান খাদ্য খাওয়ার পর নামায পড়া উচিৎ। তাই খাদ্য আগে না নামায আগে এটার
উত্তর সময় সাপেক্ষে ভিন্ন। যে নফসের সংশোধন হলে প্রতিহিংসা বশত মানুষের ক্ষতি করবেনা
এই পরিমান নফসের সংশোধন জরুরি। এই পরিমাণ সংশোধন না হলে তার ডিফেন্সিভ যুদ্ধ করা উচিৎ,
উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে গন সচেতনতা তৈরি করা বা ঈমানের উন্নতি সাধনে সচেষ্ট হওয়া।
যদি নফসের সংশোধন হয়ে যায় জিহাদের নিয়ম নীতি মেনে সামনে অগ্রসর হতে পারে। জিহাদের
নিয়ম নীতি জানার জন্য একাধিক লেখকের বই অধ্যয়ন জরুরী।
জিহাদ বিন নাফস কে কিতাল ফি সাবিলিল্লাহ
এর একটা শর্ত করার পেছনে কোরআন আর সহিহ হাদিস থেকে মাত্র একটা দলিল দেখানোর জন্য অনুরুধ
জানাচ্ছি। বস্তুত: জিহাদ বিন নাফস বড় জিহাদ আর নিজের জীবন বাজি রাখা কিতাল ফি সাবিলিল্লাহ
ছোট জিহাদ বিষয়ক হাদিসটা একটা জাল জয়িফ আর মুনকার হাদিস। এবং অবশ্যই হাস্যকর। এ ব্যাপারে
ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ, শেখ বিন বাজ, শেখ আব্দুল্লাহ ইউসুফ আজ্জাম, সালেহ আল মুনাজ্জিদ
আরও সকল সালাফে সালেহিনদের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা এবং বক্তব্য রয়েছে। এই মিথ্যা হাদিসটি
মুসলিম উম্মাহকে বিপথে পরিচালিত করেছে এবং কুফ্ফার এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা
করেছে।
পরিশেষে, গনতন্ত্রের মতো কুফরিকে
হারাম মনে করতে সন্দিহান হওয়া বড়ই বিপদজনক আমাদের এই ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত এখনই
নিতে হবে। আর, সস্তা যুক্তি দিয়ে (আগে ইমান আনা পরে জিহাদ করা) ইসলামের কোন আহকাম
(কিতাল এর মতো গুরুত্বপুর্ন) কে শর্তযুক্ত করার কোন পথ ইসলামে খুলা নেই। কোন শর্ত স্থাপনের
জন্য সুস্পষ্ট দলিল আবশ্যক। আমাদের মনে রাখা
উচিৎ, ইসলাম যৌক্তিক হলেও সকল যুক্তি ইসলাম নয়।
উপরোক্ত আলোচনা কোন ব্যক্তিগত
হামলা নয় একজন মুসলমান ভাই হয়ে আরেক ভাইকে হক্কের প্রতি নসিহত করা মাত্র। তাছাড়া উম্মতের
সঠিক দল আর তার আদর্শ উপলব্দি করা আর তা সঠিক ভাবে বর্ণনা করা প্রসংসার দাবিদার তবে
সকল প্রসংসা মন থেকে আল্লাহর কাছে দোয়া সরুপ করার নিমিত্তে প্রকাশ করলাম না। আল্লাহ
আমাদের হৃদয় সম্পর্কে সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞ। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।
(উপরোক্ত ব্যাখ্যাটি বাংলাদেশ
হতে প্রাপ্ত এক ভাইয়ের জিহাদ সম্পর্কিত কিছু ধারনার ব্যাখ্যা। সকল নিখুত নির্ভুল জ্ঞানের
মালিক একমাত্র আল্লাহ। কোন ভুল থাকলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রর্থনা করছি। সর্বপরি, আল্লাহই
সবচেয়ে ভালো জানেন।)


